গুণগত বিশ্লেষণ (Qualitative Analysis) হলো একটি বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি, যা কোনো নমুনায় উপস্থিত মৌল বা যৌগ চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে, পরিমাণগত বিশ্লেষণ (Quantitative Analysis) সেই নমুনায় থাকা মৌল বা যৌগের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
জৈব যৌগসমূহকে গুণগত এবং পরিমাণগতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে কার্বন (C) এবং হাইড্রোজেন (H) এর উপস্থিতি ও পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। এ ছাড়াও নাইট্রোজেন (N), সালফার (S), ফসফরাস (P), ও হ্যালোজেন (X) প্রভৃতি মৌলের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়।
গুণগত বিশ্লেষণ
জৈব যৌগে সাধারণত কার্বন ও হাইড্রোজেন উপস্থিত থাকে। এ ছাড়াও, নাইট্রোজেন, সালফার, হ্যালোজেন, ফসফরাস ও অক্সিজেন থাকতে পারে।
কার্বন ও হাইড্রোজেন সনাক্তকরণ
কার্বন ও হাইড্রোজেন সনাক্ত করতে যৌগটিকে তামা(II) অক্সাইড (CuO) এর সাথে উত্তপ্ত করা হয়। এতে কার্বন অক্সিডাইজ হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) এবং হাইড্রোজেন অক্সিডাইজ হয়ে পানি (H₂O) তৈরি করে।
(i). 2CuO + C → CO2 + 2Cu (i)-a. CO2 + Ca(OH)2 → CaCO3 + H2O (কার্বনের জন্য পরীক্ষা)
(ii) CuO + 2H → H2O+ Cu (ii)-a. 5H2O+ Cu(SO)4→ Cu(SO)4. 5H2O [Test for H] (হাইড্রোজেনের জন্য পরীক্ষা)
অন্যান্য মৌল সনাক্তকরণ
কার্বন ও হাইড্রোজেন সনাক্ত করার পর নাইট্রোজেন, সালফার, হ্যালোজেন ও ফসফরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এগুলো শনাক্ত করতে “লাসাইনের পরীক্ষা” (Lassaigne’s Test) করা হয়।
এই পরীক্ষায়, যৌগটি সোডিয়ামের সাথে গলিয়ে নেওয়া হয় যাতে কোভ্যালেন্ট বন্ধনযুক্ত মৌলসমূহ আয়নিক রূপে পরিণত হয়।
- Na + C + N → NaCN (সোডিয়াম সায়ানাইড)
- 2Na +S → Na2S (সোডিয়াম সালফাইড)
- Na + X → NaX (সোডিয়াম হ্যালাইড)
নাইট্রোজেন সনাক্তকরণ
সোডিয়াম ফিউশন এক্সট্রাক্ট (SFE) কে আয়রন(II) সালফেট (FeSO₄) দিয়ে ফুটিয়ে লৌহ(II) হাইড্রোক্সাইড (Fe(OH)₂) তৈরি করা হয়। এটি সোডিয়াম সায়ানাইডের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ফেরোসায়ানাইড (Na₄Fe(CN)₆) উৎপন্ন করে। এরপর FeCl₃ ও HCl এর সাথে প্রতিক্রিয়া করলে ফেরি ফেরোসায়ানাইড তৈরি হয় যা “প্রুশিয়ান ব্লু” রঙের হয়।
- FeSO4 + 2NaOH → Na2SO4 + Fe(OH)2
- Fe(OH)2+ 6NaCN → Na4(Fe(CN)6+ 2NaOH
- 4FeCl3+ 3Na4(Fe(CN)6 → Fe(iii)4[(Fe(ii)(CN)6]3 (প্রুশিয়ান ব্লু রঙ হলে নাইট্রোজেন উপস্থিত)+ 12NaCl
সালফার সনাক্তকরণ
সোডিয়াম ফিউশন এক্সট্রাক্ট (SFE) অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও লিড অ্যাসিটেট (Pb(CH₃COO)₂) এর সাথে বিক্রিয়া করালে, যদি কালো রঙের পিবিএস (PbS) তৈরি হয় তবে সালফার উপস্থিত রয়েছে।
Na2S + Pb(CH3COO)2 → PbS (কালো) + 2NaCOOCH3
সালফার এবং নাইট্রোজেন উভয়ই থাকলে, সোডিয়াম থায়োসায়ানেট (NaSCN) উৎপন্ন হয়, যা ফেরিক ক্লোরাইডের (FeCl₃) সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে লাল রঙ সৃষ্টি করে। অতএব, রক্ত লাল রঙের উৎপন্ন হলে বোঝা যায় যে যৌগটিতে নাইট্রোজেন এবং সালফার উভয়ই আছে।
Na2S + Na2(Fe(CN)5NO) → Na4(Fe(CN)5NOS) (ভায়োলেট)
হ্যালোজেন সনাক্তকরণ
সোডিয়াম ফিউশন এক্সট্রাক্টকে (SFE) প্রথমে ঘনীভূত নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO₃) দিয়ে ফুটিয়ে সোডিয়াম সায়ানাইড ও সোডিয়াম সালফাইড ধ্বংস করা হয়। এরপর AgNO₃ (সিলভার নাইট্রেট) যুক্ত করলে প্রতিক্রিয়া হয়ঃ
NaX+AgNO3→NaNO3+AgXNaX + AgNO_3 \rightarrow NaNO_3 + AgX
যেখানে,
- সাদা পিপিটি (AgCl), যা অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইডে দ্রবীভূত হয় = ক্লোরিন (Cl) উপস্থিত
- হলুদ পিপিটি (AgBr), আংশিক দ্রবণীয় = ব্রোমিন (Br) উপস্থিত
- হলুদ পিপিটি (AgI), অদ্রাব্য = আয়োডিন (I) উপস্থিত
যদি জৈব যৌগে নাইট্রোজেন বা সালফার উপস্থিত থাকে, তবে প্রথমে SFE-কে ঘনীভূত নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO₃) দিয়ে ফুটিয়ে সোডিয়াম সায়ানাইড বা সোডিয়াম সালফাইড ধ্বংস করতে হয়, এরপর AgNO₃ পরীক্ষা করা হয়।
ফসফরাস সনাক্তকরণ
জৈব যৌগে ফসফরাস থাকলে, যৌগটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট (যেমন সোডিয়াম পারঅক্সাইড, Na₂O₂) দ্বারা উত্তপ্ত করলে সোডিয়াম ফসফেট (Na₃PO₄) গঠিত হয়। তারপর, এটি নাইট্রিক অ্যাসিড এবং অ্যামোনিয়াম মলিবডেটের সাথে প্রতিক্রিয়া করলে ফসফরাসের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
- 2P + 5Na2O2 → 2Na3PO4 + 2Na2O
- Na3PO4 + 3 HNO3 → H3PO4 + 3NaNO3
- H3PO4 + 12(NH4)2MoO4 + 3 HNO3 → (NH4)3PO4 .12MoO3 + 21NH4NO3 + 12H2O
এইভাবে আমরা জৈব যৌগের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন মৌলসমূহের গুণগত এবং পরিমাণগত বিশ্লেষণ করতে পারি, যা জৈব রসায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

